জাত পরীক্ষাগার
জাত পরীক্ষাগার বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সীর প্রধান কার্যালয় গাজীপুরে অবস্থিত । ১৯৯৫ ইং সালে বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সীতে জাত পরীক্ষণ উইং প্রতিষ্ঠিত হয় । তবে ১৯৯৭ সাল থেকে ১২ একর কন্ট্রোল ফার্ম প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর নিয়মিত ভাবে অত্র উইং এর কর্ম কান্ড বৃদ্ধি পেয়েছে। অতিরিক্ত পরিচালক ( সীড রেগুলেশন ও মান নিয়ন্ত্রণ) এই উইং এর প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন । ২০০৯ সনে জাত পরীক্ষাগারে ডিএনএ ফিঙ্গার প্রিন্টিং ল্যাবরেটরী (DNA finger-printing Laboratory) এর সুবিধাসহ স্থাপিত হয়েছে । এ উইং এর মূল উদ্দেশ্য হলো, নোটিফাইড ফসলের নতুন জাত ছাড়করণের সমন্বয় সাধন এবং ছাড়কৃত বিভিন্ন জাতের কৌলিক বিশুদ্ধতা সংরক্ষণের মাধ্যমে বীজ মান নিয়ন্ত্রণ করা ।
জাত পরীক্ষণ উইং এর কার্যাবলী :
১। ব্রিডার কর্তৃক আবেদনকৃত নোটিফাইড ফসলের নতুন জাতের ডি ইউ এস টেষ্ট (DUS Test) সম্পন্ন করা।
২। বীজ ফসলের মাঠ পর্যায়ে প্রত্যয়নের পূর্বে ও পরে বীজের মান যাচাই এবং সাথে সাথে হাট বাজারে বিক্রয়কৃত বীজ নমুনা সংগ্রহ করে কৌলিক বিশুদ্ধতা যাচাইয়ের জন্য প্রি - পোষ্ট কন্ট্রোল ও গ্রো-আউট টেষ্ট (Pre - Post Control &Grow-out Test) সম্পন্ন করা।
৩। নতুন হাইব্রিড জাতের (ধান, গম) নিবন্ধনের জন্য আঞ্চলিক ট্রায়াল কার্যক্রম ব্যবস্থাপনা ও বাস্তবায়ন করা;
৪। নোটিফাই্ড ফসলের নতুন উদ্ভাবিত ইনব্রিড এবং হাইব্রিড জাতের (ধান ও গম) বিভিন্ন অঞ্চলে মাঠ মূল্যায়ন কার্যক্রম সমন্বয় সাধন ও বিভিন্ন অঞ্চলের মূল্যায়ন ফলাফল সংকলন করে প্রস্ত্ততকৃত প্রতিবেদন, কারিগরী কমিটি, জাতীয় বীজ বোর্ডের সভায় জাত ছাড়করণ ও নিবন্ধনের সুপারিশ প্রণয়নের নিমিত্তে উপস্থাপন করা ।
৫। কারিগরী কমিটি, জাতীয় বীজ বোর্ডের সকল কার্যক্রমের সমন্বয় সাধন এবং কারিগরী কমিটির সভায় আলোচ্য কর্মসূচী নির্ধারনপূর্বক কার্যপত্র ও কার্যবিবরণী তৈরী করা এবং সকল সদস্যের মধ্যে বিতরণ করা ।
৪। প্রয়োজন মত হাইব্রিড ও ইনব্রিড ধানের জাতের ডিএন এ ফিঙ্গার প্রিন্টিং কার্যকম বাস্তবায়ন করা।
জাত পরীক্ষাগার এ দুই ধরনের টেষ্ট করা হয় :
১। ডি ইউ এস টেষ্ট (DUS Test) :
আমাদের দেশে বর্তমানে নোটিফাইড ফসলের ক্ষেত্রে ডি ইউ এস টেষ্ট (DUS= Distinctness, Uniformity and Stability) টেষ্ট জাত ছাড়করণের একটি অবশ্যকীয় পরীক্ষা হিসেবে স্বীকৃত । এই টেষ্ট জাতীয় বীজ বোর্ড অনুমোদিত UPOV (The international Union for the Protection of New Varieties of Plants) এর গাইডলাইন অনুসরণে সম্পন্ন করা হয়ে থাকে ।
বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সীর কন্ট্রোল ফার্মে পরপর দুই বছর DUS Test কার্যক্রম চলে। পরীক্ষা প্লট গুলোতে গাছের বিভিন্ন বৃদ্ধি পর্যায়ে প্রজননবিদ কর্তৃক সরবরাহকৃত Descriptor অনুযায়ী বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য গুলো পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষা করা হয়। প্রচলিত চেক জাত থেকে স্বাতন্ত্র বৈশিষ্ট্যগুলো চিহ্নিত করা হয় এবং পরপর দুই বছর এ কার্যক্রমের মাধ্যমে বৈশিষ্ট্যগুলোর স্থায়িত্ব পরীক্ষা করা হয়। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট গবেষণা প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে নতুন লাইন গুলোর মাঠ পর্যায়ে উপযুক্ততা যাচাই এর জন্য ট্রায়াল স্থাপন করা হয়। যাকে VCU Test (Value for Cultivation and uses) বলা হয়। জাতীয় বীজ বোর্ড অনুমোদিত মাঠ মূল্যায়ন দলের মাধ্যমে আবেদনকৃত লাইন গুলোর মূল্যায়ন সম্পন্ন করা হয় এবং বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সীর সদর দপ্তরে এই মূল্যায়ন ফলাফল প্রেরণ করা হয়। এসব মূল্যায়ন ফলাফলের সংকলিত প্রতিবেদন এবং DUS Test কার্যক্রম এর মাধ্যমে প্রস্ত্ততকৃত চূড়ান্ত Descriptor(জাতের সনাক্তকারী বৈশিষ্ট্যের বর্ণনা) কারিগরী কমিটির সভায় উপস্থাপন করা হয়।
এই টেষ্টের মাধ্যমে ব্রিডার্স রাইট (Breeder’s Right) প্রতিষ্ঠা করা হয় এবং ফসলের জাত হনন (Varietal Piracy) থেকে রক্ষা করা হয় । জাতের সনাক্তকা্রী বৈশিষ্ট্যের বর্ণনা তৈরী করার ফলে এই টেষ্ট জাত উদ্ভাবনকারী বিজ্ঞানী, সম্প্রসারণকর্মী, বীজ ডিলার, বীজ উৎপাদক ও বীজ প্রত্যয়নকারী কর্মকর্তা কর্তৃক মাঠ পর্যায়ে বীজের মাননিয়ন্ত্রণে বিশেষ ভূমিকা রাখে । বীজ বিধি, ১৯৯৮ ইং এর ধারা ৬ অনুসারে বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সীর দায়িত্ব হিসেবে এই টেষ্টের কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে থাকে ।
২। প্রি-পোষ্ট কন্ট্রোল ও গ্রো-আউট টেষ্ট (Pre –Post Control & Grow-Out Test) :
প্রজনন, ভিত্তি ও প্রত্যায়িত শ্রেণির যে সব লট কেন্দ্রিয় বীজ পরীক্ষাগার ও আঞ্চলিক বীজ পরীক্ষাগার এর বীজ পরীক্ষায় অনুমোদিত মানের পাওয়া যায়, সে সব লটের পূর্ব গৃহীত নমুনার একাংশ হতে বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সীর কন্ট্রোল ফার্মে ফসল উৎপাদন করে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ অফ টাইপ/ বিজাত সনাক্তকরণের মাধ্যমে জাতের কেীলিক বিশুদ্ধতা নিরূপন করেন। অতপর: ফসলের উপযুক্ত পর্যায়ে মাঠ দিবস অনুষ্ঠিত করে ক্রটিপূর্ণ নমুনা প্লটের লটসমুহ হতে মাঠ পর্যায়ে উৎপাদিত বীজ ফসলের মাঠ প্রত্যয়নকারী কর্মকর্তা এবং বীজ উৎপাদনকারী সংস্থার প্রতিনিধিগণকে সরেজমিনে পরিদর্শনের ব্যবস্থা করা হয় এবং জমিগুলি নিবিড় পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে অফটাইপ/বিজাত রোগিং এর পরামর্শ প্রদান করা হয়। এটি বীজ ফসলের্ জাতের বিশুদ্ধতায় গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে।
প্রজনন বীজ হতে ভিত্তি বীজ এবং ভিত্তি বীজ হতে প্রত্যায়িত বীজ উৎপাদন করা হয় বিধায় প্রজনন বীজের গ্রো-আউট টেষ্ট পরবর্তী ভিত্তি বীজের জন্য প্রি-কন্ট্রোল, ভিত্তি বীজের গ্রো-আউট টেষ্ট প্রজনন বীজের পোষ্ট কন্ট্রোল এবং প্রত্যয়নাধীন প্রত্যায়িত শ্রেণির জন্য পি-কন্ট্রোল টেষ্ট হিসেবে কাজ করে। এ পরীক্ষার মাধ্যমে মাঠ প্রত্যয়নকারী সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা এবং উৎপাদনকারীর কাজের মান ও মূল্যায়ন করা হয়ে থাকে।